প্রকাশিত: Thu, Feb 22, 2024 12:38 AM
আপডেট: Wed, Jun 25, 2025 3:20 PM

[১] মাতৃভাষাই শিক্ষার মাধ্যম হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী

সালেহ্ বিপ্লব: [৩] প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মাতৃভাষা সংরক্ষণ, চর্চা এবং শক্তিশালী করার পাশাপাশি সঠিক অনুবাদের মাধ্যমে শিল্প-সাহিত্যকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে। বাঙালি জাতি যে নিজের ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে তা তুলে ধরা আমাদের সকলের কর্তব্য। বিটিভি, বাসস

[৩.১] বুধবার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। 

[৪] তিনি বলেন, আমাদের মাতৃভাষাকে রক্ষা করা, চর্চা করা এবং আরো শক্তিশালী করে আমাদের শিল্পকলা, সাহিত্য সব অনুবাদ করে সারাবিশে^ ছড়িয়ে দিয়ে বাঙালি জাতি যে  ভাষার জন্য নিজের জীবন দিয়ে গেছেন সেটা মানুষের সামনে তুলে ধরা আমাদের সকলের কর্তব্য। আর এই ইনস্টিটিউট থেকে আমি সেটাই আশাকরি।

[৫] সরকারপ্রধান বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট এবং বাংলা একাডেমী এই দু’টোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। একে অপরের পরিপূরক হয়ে কাজ করতে হবে। আমরা যখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করি তখন এটাই আমাদের মাথায় ছিল। এই দু’টি প্রতিষ্ঠান যদি একসঙ্গে কাজ করে তাহলে আমরা আরো অধিক পরিমাণে শিল্প, সাহিত্য, কলাসহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবো এবং সেটাই সরকারের প্রত্যাশা।

[৬] প্রধানমন্ত্রী প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভাষাকে এগিয়ে নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে  ডিজিটাল ডিভাইসের সাহায্যে অনুবাদ করলেও তা যথাযথ সংশোধনের মাধ্যমে যথোপযোগী করে ব্যবহারের আহ্বানও জানান।

[৭] শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে বাংলায় বক্তৃতা দিয়ে বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে আসেন যে পদাংক অনুসরণ করে তিনি নিজেও জাতিসংঘে (সাধারণ অধিবেশন) তাঁর প্রতিটি বক্তৃতা বাংলায় করেছেন, যেটা অনুবাদ করেই অন্যান্য ভাষায় দেওয়া হয়। শুধু ভাষণের মধ্যেই নয় বাঙালিকেও মানুষ জানুক, বিশ্ব আরো জানুক। আমরা যে বিজয়ী জাতি, আমাদের একটি ভাষা আছে, সংস্কৃতি আছে সেটাও সারাবিশ্ব জানুক সেটাই আমরা চাই।

[৮] প্রধানমন্ত্রী এই সময় ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে জাতির পিতা প্রদত্ত ভাষণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের উদ্ধৃতি তুলে ধরেন।

[৮.১] জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সকল মানুষের আশা আকাঙ্খা বাস্তবায়নের উপযোগী একটি বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য বাঙালি জাতি পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

[৮.২] প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালি শান্তিতে বিশ্বাস করে। আমরা আর যুদ্ধ চাইনা,শান্তি চাই। সারাবিশ্বের যুদ্ধ ও অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ হোক এবং এই অস্ত্র প্রতিযোগিতার যে অর্থ তা মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞান, গবেষণা এবং জলবায়ু পরিবর্তন, শিশু ও নারী শিক্ষা থেকে শুরু করে তাদের স্বাস্থ্য-সবক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হোক সেটাই আমরা চাই। কাজেই শান্তি থাকলেই কিন্তু প্রগতি আসে, উন্নতি হয়, এগিয়ে চলা যায়। দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। আমরা আর পেছনে ফিরে তাকাবো না। 

[৯] শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী। স্বাগত বক্তৃতা করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান।

[১০] বাংলাদেশে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি এবং অফিস প্রধান সুজান ভাইজও বক্তব্য রাখেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. হাকিম আরিফ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. শিশির ভট্টাচার্য।

[১১] শুরুতে প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে ‘মুজিব শতবর্ষ যাদুঘর এবং আর্কাইভ’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিনি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষায় রচিত জাতির পিতার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং মাতৃভাষা পিডিয়া এবং মার্টি লিঙ্গুয়াল পকেট ডিকশনারির মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।

[১২] আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট আয়োজিত লিংগুয়েসটিক অলিম্পিয়াড বিজয়ীদের মাঝে ও পুরস্কার বিতরণ করেন।

[১৩] অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি এবং অফিস প্রধান সুজান ভাইজ প্রধানমন্ত্রীর কাছে ইউনেস্কো ক্যাটাগরি-২ চুক্তি নবায়ন নথি ও উপস্থাপন করেন।

[১৪] অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। দেশ বিদেশের শিশুরা নিজস্ব মাতৃভাষায় প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানায়।